বিরিশিরি – নেত্রকোনা

বিরিশিরি নেত্রকোনা জেলার অন্যান্য দর্শনীয় একটি স্থান । বাংলাদেশ একটি অনন্য সুন্দর দেশ যেখানে দেখার মতো অনেক জায়গা রয়েছে। নেত্রকোনা জেলার বিরিশিরির গল্প বলি। বিরিশিরির প্রধান আকর্ষণ বিজয়পুর চীনামাটির খনি। এ ছাড়া অন্যান্য দর্শনীয় স্থান হলো রাণীখং চার্চ, কমলা রানীর দীঘি ও সোমেশ্বরী নদী। জাফলংয়ের স্বচ্ছ পানি কিংবা সেন্টমার্টিনের গভীর নীল জলরাশি অনেকেরই জানা। কিন্তু সবুজ আর নীলের সাথে মিশে থাকা অদ্ভুত রঙের লেক দেখেছেন কখনো? আপনি যদি এটি এখনও না দেখে থাকেন তবে এখনই প্রস্তুত হন। শীতের এই শেষ বিরিশিরি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। কারণ অধিকাংশ রাস্তাই কাঁচা। বৃষ্টির দিনে কর্দমাক্ত রাস্তায় হাঁটতে কষ্ট হয়।

বিরিশিরির সৌন্দর্য আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও সব কোলাহল ভুলে যাবে। আবার বিরিশিরির প্রধান আকর্ষণ চীনের মাটির পাহাড়, যার বুক থেকে উঠে আসা নীল-সবুজ লেক। সাধারণ পানির রং গাঢ় হয়ে গেছে। তবে বিরিশিরিতে গিয়ে এই সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারেন।

একটু এগিয়ে যেতে হবে বিজয়পুর ছিনামাটির পাহাড়ে। বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক জলবায়ু, কংশ-টেপ্পা-সোমেশ্বরীর কাশবন এবং দূরত্বে আকাশের দিকে হেলে থাকা রাজকীয় গারো পাহাড়ের ধ্যানমগ্ন প্রতিকৃতি ব্রিটিশ আমল থেকেই সৌন্দর্যপ্রেমীদের মন কেড়ে নিয়েছে। সোমেশ্বরীর তীরে অবস্থিত বিরিশিরির সৌন্দর্য বর্ষাকালে বহুগুণ বেড়ে যায়।

পাহাড় থেকে নেমে আসা প্রবাহিত স্রোতের রুক্ষ সৌন্দর্য বর্ষাকালে বিরিশিরিতে আসা পর্যটকদের কাছে তার বন্য সৌন্দর্য দেখায়। বিরিশিরিতে রয়েছে পাহাড়ি কালচারাল একাডেমি। এখানকার বাসিন্দাদের ৬০ শতাংশ গারো, হাজং ইত্যাদি জাতিগোষ্ঠীর। এখানে টুঙ্কা বিপ্লবের কিছু স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। হাজং ভাষায় তেভাগা আন্দোলনের আরেক নাম টুঙ্কা বিপ্লব।

তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি কমরেড রাসমণি সিং-এর একটি স্মারক মূর্তি রয়েছে। এখানকার প্রায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারী পাহাড়ি- গারো, হাজং।

সুসং দুর্গাপুরে দেখার কি আছে?

গারো পাহাড়:

গারো পাহাড় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো-খাসিয়া পর্বতমালার অংশ। এর কিছু অংশ ভারতের আসাম রাজ্য এবং বাংলাদেশের নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত। গারো পাহাড়ের আয়তন প্রায় ৮০০০ বর্গকিলোমিটার।

সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি:

দুর্গাপুর এক সময় সুসং রাজ্যের রাজধানী ছিল। দুর্গাপুর ছিল সুসং রাজ্যের রাজধানী, ৩ হাজার ৩৫৯ বর্গমাইল এলাকা এবং প্রায় ৯৫০ গ্রাম এলাকা জুড়ে ছিল। বর্তমানে এটি নেত্রকোনার একটি উপজেলা। সোমেশ্বর পাঠক থেকে, তার বংশধররা প্রায় ৬৬৭ বছর ধরে এই রাজ্য শাসন করেছিল। কিন্তু রাজাকৃষ্ণ নামে এক রাজার শাসনামল থেকে সুসং রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাজপরিবারে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ফলে সমগ্র রাজ্য চারটি ভাগে বিভক্ত হয়ে চারটি পৃথক প্রাসাদ প্রতিষ্ঠিত হয়। বাড়িগুলো ‘বড় বাড়ি’, ‘মধ্যম বাড়ি’, ‘আবু বারি’ এবং ‘দুআনি বাড়ি’ নামে পরিচিত ছিল।

সংখ্যালঘুদের জন্য সাংস্কৃতিক একাডেমি:

দুর্গাপুর বাসস্টপের পাশেই রয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি। এই অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনযাত্রার বেশ কিছু নিদর্শন এখানে সংরক্ষিত আছে।

টঙ্ক আন্দোলনের স্মৃতিস্তম্ভ:

১৯৪৬-৫০ সালে তৎকালীন জমিদারদের ভাগ্নে কমরেড মণিসিংহের নেতৃত্বে জমিদারদের বিরুদ্ধে টঙ্ক আন্দোলন শুরু হয়।

টঙ্ক মুভমেন্ট মেমোরিয়াল, দুর্গাপুর

টঙ্ক আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছিল। সোমেশ্বরী নদী পেরিয়ে এমকেসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশেই স্মৃতিস্তম্ভটি দেখা যায়। প্রয়াত রাজনীতিবিদ জালাল উদ্দিন তালুকদারের দান করা জমিতে স্মৃতিসৌধটি নির্মিত হয়েছে। প্রতি বছর ৩১শে ডিসেম্বর কমরেড মণিসিংহের মৃত্যুবার্ষিকীতে এখানে পাঁচ দিনব্যাপী লোকসাহিত্যের মেলা বসে।

সাধু যোসেফের ধর্মপল্লীঃ

সুসং দুর্গাপুর থেকে সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে রিকশায় যেতে হয় রানীখং গ্রামে। সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী। রানীখং গ্রামের এই ক্যাথলিক গির্জাটি ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

হাজং মাতা রাশিমণি স্মৃতিস্তম্ভ:

দুর্গাপুর বাজার থেকে বিজয়পুর পাহাড় পর্যন্ত সড়কের কামারখালী বাজারের পাশে বহেরাতলীতে এই রাশিমণি স্মৃতিস্তম্ভটি অবস্থিত।

সীমান্তে গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বাঘাঝাড়া’ নামক গ্রামটি ছিল ব্রিটিশ বিরোধী গ্রামগুলোর একটি। রাশিমণি ওই গ্রামের একজন প্রটেস্ট্যান্ট ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ মহাজন ও জোতদারদের অন্যায় নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং টঙ্ক আন্দোলনের অন্যতম নেতা হয়ে ওঠেন।

সাদা মাটির পাহাড়ঃ

সাদা মাটি দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের আরাপাড়া ও মাইজপাড়া মৌজায়, বিজয়পুরের শাসার পাড় ও বহেরাতলী গ্রামে অবস্থিত। এখানে চীনা মাটি সংগ্রহ করে পাহাড়ে ছোট ছোট পুকুরের মতো গভীর জলাধার তৈরি করা হয়েছে। পাহাড়ের গায়ে স্বচ্ছ নীল জলাশয় দেখতে খুবই সুন্দর।

সোমেশ্বরী নদী:

সোমেশ্বরী নদী তার স্বচ্ছ জল এবং বালুচরের জন্য পরিচিত। সোমেশ্বরী নদী বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলায় প্রবাহিত একটি নদী। সোমেশ্বরী নদী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ে পশ্চিম থেকে বিঞ্চুরিছড়া, বাঙ্গাছড়া এবং রামফা নদীর মতো উৎসের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। .

কংশ নদী:

কংশ নদী ভারত ও বাংলাদেশের মেঘালয়ের মধ্যে প্রবাহিত। নদীটি ভারতের শিলং মালভূমির পূর্ব দিকে তুরার কাছে গারো পাহাড়ে উঠেছে।

আত্রাখালী নদী:

আত্রাখালী নদী সুসং দুর্গাপুর বাজারের উত্তর পাশ দিয়ে সোমেশ্বরী নদী থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে। আরেকটু এগিয়ে সোমেশ্বরী মূল স্রোতে যোগ দিয়েছেন।

এছাড়া পথ ধরে আসে সেন্ট জোসেফের চার্চ। গির্জাটি খুব পরিষ্কার, শান্ত এবং খুব সুন্দর। তারপর পৌঁছে যাবেন বিজয়পুরের চিনামাটি পাহাড়ে। এটি প্রায় ১৫.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৬০০ মিটার চওড়া, পাহাড় এবং সমতল ভূমি সহ। পাহাড়ের সর্বত্রই সাধারণ মাটি। কোথাও কোথাও লাল মাটিও দেখা যায়। পাহাড় থেকে জমি কেটে হ্রদ তৈরি হয়েছে, যার জল স্বচ্ছ নীল, সবুজ নীল বা সমস্ত লাল। কিন্তু লাল পানি এখন প্রায় শেষ। এই লেকের নীল জল আপনার সমস্ত ক্লান্তি ও ক্লান্তি দূর করবে। সাদা মাটির পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে চলেছে সুন্দর নীলের উৎস সোমেশ্বরী নদী। যেগুলো এখন কয়লা খনি নামে পরিচিত। এছাড়া দুর্গাপুর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে উত্তর সীমান্তে পাহাড়ের চূড়ায় রাণীখং চার্চ অবস্থিত। এই পাহাড়ের চূড়া থেকে বিরিশিরির সৌন্দর্য অন্য মাত্রা নেয়।

কমলা রানীর দীঘি বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের পাশে অবস্থিত। এই কমলা রাণী দীঘি সাগর দীঘি নামেও পরিচিত। যদিও হ্রদটি সম্পূর্ণভাবে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে, তবুও এর দক্ষিণ-পশ্চিম পাড় এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিরিশিরির শান্ত, কোলাহলহীন, নির্মল পরিবেশ মনে প্রশান্তি এনে দেয়। এমন পরিবেশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে খারাপ লাগবে না। এ ছাড়া যেদিকে চোখ যায় শুধু পাহাড় দেখতে পান। তবে বেশিরভাগই ভারতে।

কিভাবে যাবেন:

যারা ঢাকায় আছেন তারা ঢাকার মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সরাসরি দুর্গাপুরের বাসে করে বিরিশিরি যাওয়া যায়। ৫-৭ ঘন্টার মধ্যে আপনি পৌঁছে যাবেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বিরিশিরি। তা ছাড়া প্রতি রাতের ট্রেন কমলাপুর থেকে নেত্রকোনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেনে আপনি নেত্রকোনা পৌঁছাতে পারেন এবং সেখান থেকে বিরিশিরি যেতে পারেন। বিরিশিরি পৌঁছানোর সহজ এবং সব উপায় দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

কোথায় থাকবেন:

দুর্গাপুরে থাকার জন্য একটি ভাল জায়গা হল ইয়ুথ মেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইএমসিএর রেস্ট হাউস এবং সাংস্কৃতিক একাডেমি। এছাড়া দুর্গাপুরে মাঝারি মানের কিছু হোটেল আছে। স্বর্ণা গেস্ট হাউস, হোটেল সুসং, হোটেল গুলশান ইত্যাদির ভাড়া খুবই কম। আঞ্চলিক বিশেষত্ব – নেত্রকোনা জেলার বিখ্যাত খাবার বালিশ মিষ্টি খেতে ভুলবেন না।

এই বিষয়ে আরও তথ্য  জানতে  চাইলে এই লিংকে দেখতে পারেন।

আপনি যদি ভ্রমণ পিপাসু হয়ে থাকেন তাহলে আধুনিক স্থাপত্য, ঐতিহাসিক স্থান, নদী ও সমুদ্র সৈকত, পাহাড়ি অঞ্চল, বাগান ও বনাঞ্চল, বিনোদন কেন্দ্র ইত্যাদি ভ্রমণ স্থানগুলো নিচের লিংক হতে পাবেন।

আপনি রাজশাহীর কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা ভ্রমল স্থানটি দেখতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *