দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ী জমিদার বাড়িটি রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলা অফিস ও পীরগাছা রেলস্টেশনের কাছে অবস্থিত। পীরগাছার স্থানীয়রা মন্থনার জমিদার বাড়িকে রাজবাড়ি বলে।
প্রাসাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোট-বড় অনেক পুকুর। বাড়ির পেছনে দেবী চৌধুরানীর খনন করা ঢুসমারা খাল অর্থাৎহঠাৎবা অকষ্মাৎসৃস্টি খালটি কোনো না কোনোভাবে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে সংরক্ষিত আছে। দেবী চৌধুরানী বিভিন্ন গোপন পরিস্থিতিতে নদীতে নৌকাযোগে এই খাল দিয়ে যাতায়াত করেন।
বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই রাজপ্রাসাদের অনেক ভবনই এখন ধ্বংসস্তূপে। ভবনের ইট, পাথর ও ইট উন্মোচন করা হয়েছে।
জরাজীর্ণ দেয়াল আর শেওলার আঁচড়ে বেড়ে উঠেছে পরগাছা। ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজবাড়ীর নাট্য মন্দির ও কাছারি ঘর বর্তমানে পীরগাছা উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রেশন অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রাসাদে নির্মিত প্রাচীন মন্দিরগুলি ধ্বংসপ্রাপ্ত সময়ের সাক্ষ্য বহন করে। জমিদার জ্ঞানেন্দ্র নারায়ণ রায়ের তৈরি অপূর্ব কারুকাজ সম্বলিত ১৫০ বছরের পুরনো দৃষ্টি নন্দিত ত্রিবিগ্রহ মন্দিরটি ভেঙে পড়ার দিন গুনছে।
এখানে একটি মন্দিরে অন্নপূর্ণা বিশ্বেশ্বর, শিব ও হরিহরের তিনটি মূর্তি পাশাপাশি রাখা হয়েছে। বাংলায় মন্দির বিবাহের ইতিহাসে এক অনন্য ও বিরল উদাহরণ। পীরগাছার মন্থনা জমিদার ছিলেন ফকির সন্ন্যাসীর কিংবদন্তি মেরকাত যিনি ভারতের প্রথম মহিলা যিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রজাদের অবর্ণনীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন এবং তাদের দাসী দেবী সিং এবং যিনি ১৭৮৩ সালে রংপুর বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মন্থনা জমিদার দেবী চৌধুরানীর। আসল নাম ছিল “জয়াদুর্গা দেবী চৌধুরানী”। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্রোপাধ্যায় আনন্দমঠ ও দেবী চৌধুরানী নামে দুটি গ্রন্থ রচনা করেন। এখানে হিন্দু সম্প্রদায় প্রতি বছর পূজা পার্বণ পালন করে থাকে।
এছাড়াও, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন এখানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মড়হনা জমিদার জ্ঞানেন্দ্র নারায়ণের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে একটি প্রাথমিক উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তার পরে জেএন হাই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে স্থানীয় সমাজসেবকদের প্রচেষ্টায় রাজবাড়ী স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় মন্থনা জমিদার রাজবাড়ী নামে। ঐতিহাসিক মন্থনা জমিদার প্রতিষ্ঠিত রাজবাড়ীর সুযোগ-সুবিধা ঘিরে এটিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সহজ হবে।