লাউচাপড়া পাহাড়িকা বিনোদন কেন্দ্র জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। শহুরে মানুষ বছরে মাত্র কয়েকবার প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভের সুযোগ পায়। আর তাই, প্রকৃতিপ্রেমীরা প্রত্যন্ত প্রকৃতির সাথে তাদের অবকাশ মিশে যেতে যেতে পারেন জামালপুরের লাউচাপড়ায়। ওয়াচটাওয়ারের উপর থেকে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজের বিস্তীর্ণ বিস্তৃতি। বাসস্থান সঙ্কুচিত হলেও প্রকৃতির ছোঁয়া পাবেন। কাঠঠোকরা আর হলুদ পাখির ডাকে ছুটি কাটে।
জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জের লাউচাপড়া পাহাড়িকা বিনোদন কেন্দ্রে গেলে এরকম কিছু পাওয়া যাবে। যতই বকশীগঞ্জ ছাড়বেন ততই সবুজ হবে পরিবেশ। পথের ধারে কোথাও পাহাড়ের পাদদেশে এসে সবুজের খেলা দেখতে। চারদিকে গারো পাহাড়ের সবুজ বন। পাহাড়ের ধারে খোদাই করা একটি বাঁকা সিঁড়ি চূড়ার দিকে নিয়ে যায়। একটি বিশাল ওয়াচ টাওয়ারও রয়েছে। দশ থেকে বারোটি সিঁড়ি বেয়ে ওঠার পর আপনি দেখতে পাবেন সবুজ। দূর থেকে আপনি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের আকাশ ছোঁয়া সব পাহাড় দেখতে পাবেন। পরিবেশটা যেন ছবির মতো। এই পাহাড়ি জঙ্গলে রয়েছে নানা ধরনের পশু-পাখি। ধান চাষের মৌসুমে মেঘালয় থেকে বন্য হাতির আরেকটি পাল আসে।
কাঠঠোকরা, হলুদ পাখি, কলিম পাখিসহ নানা ধরনের পাখি এখানে দেখা যায়। লাউচাপড়া পাহাড়ে চড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়লে লেকের ধারে গিয়ে বসতে পারেন। সবুজ ঘাসের মাঝে এই কৃত্রিম লেকটি খুবই সুন্দর। লেকের ধারে গাছের ছায়ায় কিছু সময় কাটাতে পারেন। এই সময়ের মধ্যে যদি আপনি যান, আপনি বাইরে যেতে উপভোগ করবেন। কারণ পিকনিকের মৌসুমে এখানে পিকনিক পার্টির ভিড় থাকে।
জামালপুর জেলা পরিষদ পুরো জায়গাটিকে বিনোদন ও বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। এই অবকাশ কেন্দ্রে প্রবেশের জন্য কোন চার্জ নেই। কিন্তু আপনি যদি একটি যানবাহন নিয়ে যান তবে আপনাকে এটির জন্য পার্কিং ফি দিতে হবে। পাহাড় দেখা যাচ্ছে, এখন এখানে উপজাতিদের একটি ছোট গ্রাম দেখতে পাচ্ছেন। গারো উপজাতির এই গ্রামের নাম দিকলাকোনা। এই গ্রামে ২২টি পরিবারে ১০০ গারো রয়েছে। তারা সবাই খ্রিস্টান। গ্রামে ঢোকার আগে কথা হয় এই গ্রামের মাতুব্বর প্রীতি ছেলে সরমার সঙ্গে। অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ এই মানুষটির আতিথেয়তায় আপনি মুগ্ধ হবেন। প্রতি বছর বড়দিন, ইংরেজি নববর্ষ, ইস্টার সানডে উপলক্ষে এই গ্রামে বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ডিকলাকোনা গ্রামের শুরুতে ডিকলাকোনা সালগিট্টাল হোস্টেল অবস্থিত। লাউচাপড়ায় কাটানো একটি রাত সারাজীবনের অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হতে পারে। এখানকার শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ রাতের বেলায় আরো শান্তিপূর্ণ, নরম। রাত্রি যাপনের জন্য এখানে দুটি রেস্ট হোম আছে। একটি জামালপুর জেলা পরিষদের পাহাড়িকা বাংলো এবং অন্যটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বনফুল রিসোর্ট। আপনি যদি জেলা পরিষদের রেস্ট হোমে থাকতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই আগে থেকে অনুমতি চাইতে হবে।
সংক্ষিপ্ত তথ্য: রিসোর্ট পার্কিং ফি যেকোনো বাস বা রোলার কোস্টারের জন্য ২০০ টাকা, মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, জিপ, পেস, গাড়ি ৫০ টাকা, বেবি টেক্সি, ঘোড়ার গাড়ি ২০ টাকা, মোটরসাইকেল, ভ্যান ১০ টাকা, রিকশা ৫ টাকা, সাইকেল ২ টাকা। এর মধ্যে আলাদাভাবে লেকে বোটিং করতে জনপ্রতি ১০ টাকা, ওয়াচটাওয়ারে আরোহণের জন্য ৩ টাকা এবং পিকনিক পার্টির জন্য রান্নাঘর ও চুলা ব্যবহার করতে জনপ্রতি ৫০ টাকা।
যোগাযোগ করা
পরিচালক,
জেলা পরিষদ,
জামালপুর।
ফোন: 0981-62716, 0981-63514, 0981-63240।
তবে বেসরকারি বনফুল রিসোর্টটি আরো সজ্জিত ও সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন। এই রিসোর্টে একটি সাধারণ রুমের ভাড়া ১০০০ টাকা এবং একটি উত্তপ্ত রুমের ভাড়া ১৫০০ টাকা।
যোগাযোগ – নদী এবং সবুজ ভ্রমণ,
এমআর সেন্টার, (৭ম তলা),
বাড়ি-৪৯, রোড ১৭,
বনানী বাজার, ঢাকা।
ফোন-8826759, 0789-224593।
স্থান:
ধনুয়া-কামালপুর, বকশীগঞ্জ।
কিভাবে যাবেন:
যাতায়াতঃ জায়গাটি জামালপুর জেলার অন্তর্গত হলেও শেরপুর হয়ে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ পথ। ঢাকা থেকে ড্রিমল্যান্ড পরিবহনের বাস সরাসরি শেরপুর যায়। ভাড়া ১১০ টাকা। স্পেশাল ড্রিমল্যান্ড ভাড়া ১৪০ টাকা। শেরপুর থেকে বকশীগঞ্জ পর্যন্ত বাসের ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা। সেখান থেকে লাউচাপড়া পাহাড়িকা বিনোদন কেন্দ্র যেতে হবে রিকশা বা ভ্যান জোগে।
এই বিষয়ে আরও তথ্য জানতে চাইলে এই লিংকে দেখতে পারেন।
আপনি যদি ভ্রমণ পিপাসু হয়ে থাকেন তাহলে আধুনিক স্থাপত্য, ঐতিহাসিক স্থান, নদী ও সমুদ্র সৈকত, পাহাড়ি অঞ্চল, বাগান ও বনাঞ্চল, বিনোদন কেন্দ্র ইত্যাদি ভ্রমণ স্থানগুলো নিচের লিংক হতে পাবেন।
আপনি রাজশাহী বিভাগ ভ্রমণ স্থানগুলো দেখতে পারেন।