রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা – রাজশাহী

রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা  রাজশাহী জেলার সবচেয়ে প্রাচীন চিড়িয়াখানা। যেটাকে বর্তমানে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা নামকরণ করা হয়েছে।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা ইতিহাস, আয়তন, পশু পাখি, শিশুদের জন্য রাইডার সমূহ, শিক্ষা সফর ও পিকনিক বা বনভোজন ব্যবস্থা, কিভাবে যাবেন এবং কোথায় থাকবেন সহ আরোও অনেক বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। প্রাকৃতিক পরিবেশে এখানে অনেক ধরনের পশু পাখি রয়েছে যেখানে গেলে আপনার অনেক ভালো লাগবে।

আমরা আশা এই আর্টিকেলটি  পড়লে রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা বা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানার ইতিহাস

রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানার ইতিহাস হতে জানা যায় ব্রিটিশ আমলে ইংরেজরা আমাদের দেশে ঘোড়দৌড়ের প্রচলন করে। খেলায় বাজি ধরার উত্তেজনা ছিল।

রাজশাহীর রেসট্র্যাক ছিল পদ্মার তীরে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতো দৌড় প্রতিযোগিতায় দেখতে। অনেকেই এই খেলায় সফল হয়েছেন। আয়োজকরাও লাভবান হয়েছেন।

এখন এই রেসকোর্স ময়দান রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা   বা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা নামে আমরা জানি।

চিড়িয়াখানার একটি পুরনো তথ্য পত্র থেকে জানা যায়, সেখানে ঘোড়দৌড় পর টমটম বা ঘোড়ার গাড়ির রেস হতো।

অনেক দিন পরিত্যক্ত ছিল। চিড়িয়াখানা নির্মাণে তৎকালীন মন্ত্রী শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান ও জেলা প্রশাসক আহমেদ আবদুর রউফের বড় ভূমিকা ছিল।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানার আয়তন

রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানার আয়তন ৩২.৭৬ একর জমিতে স্থাপিত হয়, যা ১৯৭২ সালে রাজস্ব বিভাগ থেকে অনুমতি লাভ করে এবং ৩ লাখ

৫৮ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প তৈরি করা হয় এবং লেক খনন, স্থানটির উন্নয়ন এবং বেশ কিছু বৃক্ষরোপণের আয়োজন করা হয়।

মূল্যবান গাছ লাগানো, ফুল গাছের জন্য কোয়ারি ও পুকুর নির্মাণ, হ্রদ ও পুকুর খনন, কৃত্রিম ঢিবি নির্মাণ, অর্থাৎ সাধারণ কাজ শুরু হয় ১৯৭৪-৭৫ এবং ১৯৭৫-৭৬ সালে।

তৎকালীন জেলা প্রশাসক শফিউর রহমান ও নজরুল ইসলামের আমলে কিছু দুষ্প্রাপ্য বৃক্ষরোপণ ও উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কখন প্রতিষ্ঠিত হয়

১৯৭৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে আবদুর রহিম খানের প্রচেষ্টায় পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবদুস সাত্তার থেকে ১ জোড়া হরিণ আনা হয়। কিন্তু তখন চিড়িয়াখানা স্থাপনের কথা হয়নি।

যখন দুটি হরিণ প্রজনন করে এবং ১৮ বছর বয়সী হয়, তখন সুরক্ষার সমস্যা দেখা দেয়।

ফলে ঢাকা চিড়িয়াখানায় ১২টি হরিণ দান করা হয়েছে। এ সময় সঠিক পরিচর্যা না করায় বাগানের মূল্যবান গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

রাজশাহী বরেন্দ্র জাদুঘর

আসলে, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানাটি ১৬/২/১৯৮৩ তারিখে শুরু হয়েছিল। জেলা পরিষদের সীমিত সম্পদ এবং রাষ্ট্রপতির পুরস্কার ১০ লাখ টাকা এবং পরে বিভাগীয় উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রাপ্ত ১০ লাখ টাকায় পার্ক ও চিড়িয়াখানার উন্নয়নের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সম্ভবত রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুস সালাম ১৯৮৩ সালে একটি বড় ড্রামে কিছু শিশু ঘড়িয়াল ছেড়ে দেন ।

১৯৮৫ সালে, জেলা প্রশাসক এবং পরবর্তীতে বিভাগীয় কমিশনার ছাইদুর রহমান এবং জেলা পরিষদের প্রকৌশলী (প্রয়াত) আব্দুর রহিমের প্রচেষ্টায় এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ চিড়িয়াখানায় (রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা) উন্নীত করা হয়।

কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার উন্নয়নে ১৯৮৬ সালের জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩৪ লাখ ৮১ হাজার ৪৯২ টাকা। ৬-৩-১৯৮৬ তারিখে বিএডিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) আনসার আলী পার্ক ও চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করেন এবং ১টি গভীর টিউবওয়েল স্থাপন করেন।

এর আগে এখানে পানির ব্যবস্থা ছিল না। ফলে বাগান, প্রাণী ও মাছ সংরক্ষণ ব্যাহত হবে। রাজশাহী সিটি করপোরেশন উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জেলা পরিষদ থেকে প্রকল্পটি কিনেছে।

১৯৯৬ সালের ২৬ নভেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী জিল্লুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটি মেয়র মো. মিজানুর রহমান মিনু।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কে প্রতিষ্ঠা করেন

রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা বা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা কোন একক ব্যক্তি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।এতে অনেকের অবদান রয়েছে।

জেলা প্রশাসক শফিউর রহমান ও নজরুল ইসলামের আবদুর রহিম খান, মন্ত্রী শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান ও জেলা প্রশাসক আহমেদ আবদুর রউফ।

১৯৭৫ সালের পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবদুস সাত্তার, ১৯৮৩ সালের রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুস সালাম, ১৯৮৫ সালের জেলা প্রশাসক এবং পরবর্তীতে বিভাগীয় কমিশনার ছাইদুর রহমান এবং জেলা পরিষদের প্রকৌশলী (প্রয়াত) আব্দুর রহিমের এর উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ করেন।

১৯৮৬ সালের বিএডিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) আনসার আলী, ১৯৯৬ সালের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী জিল্লুর রহমান, মেয়র মো. মিজানুর রহমান মিনু এবং বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন উল্লেখ্যে যোগ্য ব্যক্তি।

মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানাটিকে আধুনিক ভাবে সাজিয়েছেন  এবং তাঁর শহীদ পিতার নামনুসারে এর নাম করণ করেন  শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা ।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানার পশু পাখি

২৬ জুন, ২০০৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানার পশু পাখি রয়েছে ২টি সিংহ, ১টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার,

১টি অজগর সাপ  ১টি হাড়গিল, ১৯৪ টি চিত্রল হরিণ, ৪টি সজারু, ২৮টি বালিহাঁস, ২৬টি বানর, ৯টি বেবুন, ২টি ভাল্লুক, ১টি ঘোড়া, ৯টি শকুন।

এখানে আরও রয়েছে ২টি সাদা ময়ূর, ৪টি গাধা,  ৩টি দেশী ময়ূর, ৮৫টি তিলা ঘুঘু, ৬৮টি দেশী কবুতর, ২টি ওয়াকপাখি, ১টি পেলিকেন, ৬টি টিয়া, ৪টি ভুবন চিল, ৪টি বাজপাখি, ৩টি হুতুম পেঁচা, ২টি উদবিড়াল, ২টি মায়া হরিণ,  ৩টি ঘড়িয়াল রয়েছে।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানায় শিশুদের জন্য রাইডার সমূহ

রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানায় শিশুদের জন্য রাইডার সমূহের মধ্যে রয়েছে হ্রদে প্যাডেল বোট, নগর দোলা, দোলনা ইত্যাদি।

এছাড়া প্রধান প্রবেশদ্বারের কাছে জিরাফের ভাস্কর্য এবং মারমেইড ফোয়ারা সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। মনুষ্যসৃষ্ট পাহাড়ে উঠলেই দেখা যায় বিস্তীর্ণ পদ্মা।

যার দখিনা আকাশে প্রাণ জুড়ায়।

শিক্ষা সফর ও পিকনিক বা বনভোজন ব্যবস্থা

রাজশাহীর মানুষ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীরা প্রতিদিন শিক্ষা সফরে আসেন এখানে। শীতকালে বন ভোজনের জন্য প্রচুর পরিমাণে দর্শনাদর্থী আসে।

পিকনিক এলাকার জন্য নির্ধারিত ফি দিয়েতে হয়। সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশমূল্যও নির্ধারণ করা হয়েছে। ৯/৬/২০০৬ সালের একটি তথ্য অনুযায়ী, সেন্ট্রাল পার্ক ও চিড়িয়াখানার জনবল ৪৭ জন। গড় মাসিক আয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং খরচ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানার গুরুত্ব

রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এটি রাজশাহী জেলার প্রথম চিড়িয়াখানা। যখন  এই চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা করে তখন এর আশে পাশে কোন বিনোদন পার্ক ছিলোনা।

তাই বলা যায় এই পার্ক এর মাধ্যমে রাজশাহী জেলায় একটি বিনোদনের ব্যবস্থা হলো।

সময়সূচী ও প্রবেশ মূল্য

রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ২৫ টাকা এবং পিকনিক স্পটের জন্য আলাদাভাবে আপনাকে ফি দিতে হবে।

কোথায় অবস্থিত

রাজশাহী  কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা রাজশাহী জেলার রাজপাড়া থানার কাজীহাটা এলাকায় অবস্থিত।

কিভাবে যাবেন

রাজশাহী সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় ৩ কিমি পশ্চিমে। রাজপাড়া এলাকায় পর্যটন মোটেলের আরও পশ্চিমে এবং রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও রাজশাহী পুলিশ লাইনের পূর্বে।

মূল সড়কের উত্তর পাশের রাস্তা থেকে পার্কটি দেখা যায়। জিরো পয়েন্ট থেকে রিকশা বা গাড়িতে যাওয়া যায়।

খাওয়ার ব্যবস্থা

রাজশাহী শহরের বেশ কিছু ভালো মানের রেস্তোরা  রয়েছে এই পার্কের নিকটবর্তী এলাকায়।আপনি চাইলে এইসব রেস্তোরায় স্বল্পমূল্যে খাওয়া দাওয়া করতে পারেন। এছাড়াও এখানে বেশ কিছু উন্নত মানের আবাসিক হোটেল আছে।

রাজশাহী আবাসিক হোটেল নাম্বার

এর আশে পাশে বেশ কিছু ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য হচ্ছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ০৭২১-৭৭৫২৩৭, হোটেল গ্রান্ড রিভার ভিউ, কাজিহাটা, রাজপাড়া- ০১৮৭৭৭৬৬৯৬৬,

হোটেল এক্স, চন্ডিপুর, রাজপাড়া-০১৮৪৪০০৪২০০, হোটেল রাডার মালোপড়া, বোয়ালিয়া-০৭২১৭৭২৮৩৪, ইসলামী আবাসিক হোটেল, লক্ষীপুর, রাজপাড়া-০৭২১৮১১৩৭০, হোটেল নাইস ইন্টানন্যাশনাল, গণকপাড়া, বোয়ালিয়া-০৭২১৭৭৬১৮৮।

আমরা চেষ্টা করেছি এই আর্টিকেলটির  মাধ্যমে রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা বা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে।

চিড়িয়াখানার ইতিহাস, চিড়িয়াখানার আয়তন, কখন প্রতিষ্ঠিত হয়, কে প্রতিষ্ঠা করেন, চিড়িয়াখানার পশু পাখি, শিশুদের জন্য রাইডার সমূহ,

শিক্ষা সফর ও পিকনিক বা বনভোজন ব্যবস্থা, চিড়িয়াখানার গুরুত্ব, সময়সূচী ও প্রবেশ মূল্য, কোথায় অবস্থিত, কিভাবে যাবেন এবং কোথায় থাকবেন তার বিস্তারিত আলোচনা।

রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান

বরেন্দ্র  জাদুঘর, জিয়া পার্ক, সাফিনা পার্ক, পুঠিয়া রাজবাড়ি, উৎসব পার্ক ইত্যাদি।

আরও পড়ুন

 

উপসংহার

রাজশাহী পার্ক বলতে বর্তমানে রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানার এবং রাজশাহী  জিয়া পার্ক রয়েছে। রাজশাহী জায়গার নাম জড়িয়ে আছে বিভিন্ন কারণে যেমন রাজশাহী জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ রাজশাহী জিয়া পার্ক সময়সূচী

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *