আলেকজান্ডার ক্যাসেল-ময়মনসিংহ

আলেকজান্ডার ক্যাসেল ১৯ শতকের একটি কাঠামো। মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য ১৮৭৯ সালে এই প্রাসাদটি তৈরি করেন। সে সময় এর খরচ হয়েছিল ৪৫ হাজার টাকা। চত্বরে ছিল পুকুর ও বাগান। ইমারত নির্মাণে লোহা বেশি ব্যবহৃত হওয়ায় এটি মানুষের কাছে ‘লোহার কুঠি’ নামেও পরিচিত ছিল। আলেকজান্ডার ক্যাসেল প্রাসাদটি এখনও স্থানীয়ভাবে এই নামেই পরিচিত। বর্তমানে এটি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আলেকজান্ডার ক্যাসেল ময়মনসিংহ শহরের একটি প্রাচীন স্থাপনা। শহরের প্রাণকেন্দ্রে কোর্ট-কাচারি এলাকায় এর অবস্থান। এখানে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির পায়ের ধুলো পড়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ সফরকালে আলেকজান্ডার ক্যাসেলে অবস্থান করেন। লর্ড কার্জন, নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, কামাল পাশা প্রমুখরাও এখানে আসেন।

‘হাওর-জঙ্গল-মহিষের শিং, এই তিনে ময়মনসিংহ’ এভাবেই প্রবাদে প্রচলন হয়েছিল এক সময়ের বৃহত্তম জেলা ময়মনসিংহ।

কালের বিবর্তনে ছয়টি জেলায় রূপান্তরিত হলেও ময়মনসিংহ জেলা সদরের গুরুত্ব ও সৌন্দর্য কমেনি। বিস্তীর্ণ এই জনপদটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যের আশ্রয়স্থল। ভূসংস্থানের বৈচিত্র্যের কারণে এ অঞ্চলের মানুষের সামাজিক জীবন, চরিত্র বৈশিষ্ট্য, জীবিকা ও সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময়। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলাকে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ভান্ডার হিসেবে গড়ে তোলার পেছনে স্থানীয় শাসক ও জমিদারদের বিরাট অবদান ছিল। ময়মনসিংহ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। এই নদীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন অনেক ছবি এঁকেছেন। এখানকার অনেক স্থাপনায় রয়েছে প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর ছোঁয়া। অতীতের সাক্ষী জমিদারবাড়ি। এমনই কিছু জমিদারবাড়ির সন্ধান- যা সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের বাহক।

শশী লজ: শশী লজ মহারাজা শশীকান্ত আচার্যের বাড়ি, যা ময়মনসিংহের রাজবাড়ি নামেও পরিচিত। এই প্রাসাদের অবস্থান শহরের কেন্দ্রস্থলে ব্রহ্মপুত্র নদের কাছে। পুরো বাড়িটি নয় একর জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। মূল বাড়িটি মহারাজা সূর্যকান্ত তৈরি করেছিলেন। পরে তার দত্তক পুত্র শশীকান্ত প্রাসাদটি পুনর্নির্মাণ করেন। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে একটি বিশাল ভূমিকম্পে সূর্যকান্তের নির্মিত প্রাসাদের আংশিক পতনের কারণে এটি করা হয়েছিল। শশী লজের প্রধান ফটকে ১৬টি গম্বুজ রয়েছে। ভিতরে, প্রায় সব কক্ষের ছাদ থেকে ঝুলন্ত ঝাড়বাতি আছে। একটি নাচের হল, একটি গোসলখানা আছে। বাথরুমে একটা টানেল আছে। শোনা যায়, টানেল দিয়ে মুক্তাগাছা যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। মূল ভবনের পেছনে একটি বাথরুমও রয়েছে। পিছনের বাথরুমটি দোতলা। পুকুরের ঘাটটি মার্বেল পাথর দিয়ে সারিবদ্ধ। মূল ভবনের সামনে একটি বাগান রয়েছে। বাগানের মাঝখানে একটি শ্বেত পাথরের ফোয়ারা রয়েছে, যেখানে গ্রীক দেবী ভেনাসের একটি ভাস্কর্য রয়েছে। পাশেই একটি পদ্ম বাগান। বাড়ির চারপাশে অনেক গাছ। এখানে ১৯৫২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপিত হয়। বর্তমানে এটি ‘ময়মনসিংহ মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় বিটিভিতে প্রচারিত বিখ্যাত ধারাবাহিক নাটক ‘অয়োময়’-এর পর্বগুলোর শুটিং হয় এই শশী লজে। নাটকে ছিল জমিদারবাড়ি।

গৌরীপুর লজ: গৌরীপুর লজ একটি সুন্দর প্রাসাদ-শৈলীর ভবন যা একটি দেশীয় শৈলীতে তৈরি, টিন, কাঠ এবং লোহা দিয়ে সম্পূর্ণ। এই লজে বারান্দা, ড্রয়িং, ডাইনিং সহ ছোট-বড় প্রায় ২০টি কক্ষ রয়েছে। এই ভবনের সামনে একটি সুন্দর ফুলের বাগান রয়েছে। এর প্রতিষ্ঠাতা ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী কেন এই লজটি তৈরি করেছিলেন তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। যাইহোক, আলাউদ্দিন আলি খান, হাফেজ আলী খান, মোহাম্মদ আলী খান, মুস্তফা খান প্রমুখ সঙ্গীত বিশেষজ্ঞরা গৌরীপুর লজে এসেছিলেন এই মানুষটির সঙ্গীতের তৃষ্ণা মেটাতে, যিনি সঙ্গীতের সুন্দর রহস্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিলেন। প্রায় ১.৩৬ একর জমিতে সবুজে ঘেরা গৌরীপুর লজ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমানে পুরনো এই ভবনটি ময়মনসিংহ অঞ্চলে সোনালী ব্যাংকের কর্পোরেট অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

যেভাবে যাবেন:

মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার সরাসরি বাস আছে। ঢাকা থেকে সড়ক পথে ময়মনসিংহ যেতে সময় লাগবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। সকালে রওনা হলে সারাদিন ময়মনসিংহ ঘুরে আবার সন্ধ্যার মধ্যে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হতে পারেন। আপনি যদি ভালভাবে ঘুরে দেখতে চান তবে দুই দিন সময় নেওয়া ভাল। তবেই আপনি আপনার হৃদয়ের বিষয়বস্তুতে ঐতিহ্যের এই শহরটি উপভোগ করতে পারবেন।

অবস্থান:

ময়মনসিংহ সদর, ময়মনসিংহ

এই বিষয়ে আরও তথ্য  জানতে  চাইলে এই লিংকে দেখতে পারেন।

আপনি যদি ভ্রমণ পিপাসু হয়ে থাকেন তাহলে আধুনিক স্থাপত্য, ঐতিহাসিক স্থান, নদী ও সমুদ্র সৈকত, পাহাড়ি অঞ্চল, বাগান ও বনাঞ্চল, বিনোদন কেন্দ্র ইত্যাদি ভ্রমণ স্থানগুলো নিচের লিংক হতে পাবেন।

আপনি বরিশাল বিভাগ ভ্রমণ স্থানগুলো দেখতে পারেন।

1 thought on “আলেকজান্ডার ক্যাসেল-ময়মনসিংহ”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *